বেপরোয়া সশস্ত্র আরকান আর্মি, সীমান্তে পুঁতে রাখা স্থল মাইন বিস্ফোরণে মারা যাচ্ছে বাংলাদেশী
বান্দরবান প্রতিনিধি:
মিয়ানমারের জান্তা সরকার ও সশস্ত্র সংগঠন আরাকার আর্মির মধ্যে দীর্ঘদিনের সংঘাতের পর আরাকানের সিত্তুওয়ে শহর ছাড়া বাকী সব শহর সশস্ত্র আরাকান আর্মির দখলে। বর্তমানে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের প্রায় ২৭১ কিলোমিটার মিয়ানমার অংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে ।
ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মিয়ানমারের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর সশস্ত্র আরকান আর্মির বিদ্রোহী সংগঠনটি আরো অধিক বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নির্যাতন ও চাদাবাজিতে মেতে উঠেছে এ সংগঠনের সদস্যরা।
বর্তমানে সশস্ত্র আরকান আর্মিরা বাংলাদেশ সীমান্তের শূণ্য রেখায় কাঁটা তারের পাশে বিভিন্ন স্থানে পুঁতে রেখেছে স্থল মাইন। আর এ স্থল মাইন বিস্ফোরণে সম্প্রতি সীমান্তে বসবাসকারী অনেক বাংলাদেশী নাগরিক প্রাণ হারিয়েছে। আবার অনেকে হাত পা হারিয়ে চিরজীবনের জন্য পঙ্গুত্বকে বরণ করে নিয়েছে।
জানাযায়, সীমান্তে বসবাসকারী নিরীহ জন সাধারণ চাষাবাদের ফসল, লালিত পালিত গরু ছাগল আনতে সীমান্তে গেলে সেখানে সু কৌশলে আগে থেকে গোপনে সশস্ত্র আরকান আর্মির মাটিতে পুতে রাখা স্থল মাইন বিস্ফোরণে অনেকই নিহত হয়, আবার অনেকে আহত হয়ে সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্বকেও বরণ করে নেয়।
স্থানীয়রা জানায়, রাখাইন রাজ্যের সবচেয়ে কাছাকাছি সীমান্ত হচ্ছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা। সেখানকার জিরো পয়েন্টে থাকা স্থানীয় কৃষকরা সীমান্তের বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িত ব্যক্তিরা সবসময় মিয়ানমার আর্মির ভয়ে আতঙ্কে থাকে কখন তাদের জিম্মি করা হয় কিংবা স্থল মাইন পুঁতে তাদের চিরতরে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেয়া হয়। এমন শঙ্কায় প্রতিনিয়ত দিনাতিপাত করতে হচ্ছে সীমান্তের কৃষকদের।
বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে, ২০২৪ সালের রবিবার (৫মে) নুরুল আবছার (১৮) ও মো. বাবু (১৭) নামের দুজন যুবক বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়। একই বছর শুক্রবার (২৪ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের ৩৩/৩৪ নম্বর পিলারের মধ্যবর্তী স্থানে মাইন বিস্ফোরণে দুজন গুরুতর আহত হয়। এদের মধ্যে একজনের পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। চলতি বছরের শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) ভোরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মিয়ানমার সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়ে দুই যুবকের ডান ও বাম পায়ের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সীমান্তে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকরা সশস্ত্র আরকান আর্মির পুতে রাখা স্থল মাইন বিস্ফোরণে আহত ও নিহত হওয়া ছাড়া নানাভাবে নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে।
অথচ, আন্তর্জাতিক আইনে জিরো লাইনে স্থল মাইন পুতে রাখা নিষিদ্ধ হলেও সশস্ত্র আরকান আর্মিরা তার তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়ত একের পর এক স্থল মাইন পুতে রাখছে।
সীমান্তে কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানাযায়, সশস্ত্র আরকান আর্মি পূর্বের জান্তা সরকারের চেয়ে আরো বেশি ভয়ঙ্কর ও উগ্র। সীমান্তে যারা গরু, সিগারেটসহ নানা ধরণের ব্যবসায় লিপ্ত তাদের মিয়ানমারের গেইট দিয়ে প্রবেশ করতে আরকান আর্মিকে মাথাপিচু ৫শ টাকা করে দিতে হয়। যদি তা অমান্য করে তবে সশস্ত্র আরাকান আর্মির সদস্যরা তাদের আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন করাসহ সীমান্ত থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগও শোনাযায়।
এ বিষয়ে রোহিঙ্গাদের আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দানকারী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা অর্গানাইজন (এআরও) এর পক্ষ থেকেও তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।