সংখ্যানুপাতিক প্রদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে, সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে আবারো ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে: সেক্রেটারী জেনারেল
বান্দরবান প্রতিবেদক: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, শেখ হাসিনা বিগত ১৭বছর মানুষের ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার হরণ করে দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। সাজানো আদাল, সাজানো বিচারক ও সাজানো রায় দিয়ে জামায়াত ইসলামীসহ বিরোধী দলের শত শত নেতাকর্মীদের হত্যা করেছিল। আয়না ঘর সৃষ্টি করে শত শত মানুষকে গুম ও হত্যা করেছিল ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, চোর, ডাকাত, খুনি, অত্যাচারি ও ফ্যাসিস্টরা পালিয়ে যায়, শেখ হাসিনাও পালিয়ে গিয়ে তা প্রমান করেছে। তিনি আরো বলেন, সংস্কার ছাড়া এ অবস্থায় নির্বাচন হলে আবার ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে। তাই দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলো সংস্কার ও মানবতা বিরোধী খুনিদের বিচার, শেখ হাসিনাসহ গণহত্যাকারী, দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটকারী, বিদেশে পাচারকারী, দূর্ণীতিবাজদের বিচার দৃশ্যমান করে এবং সংখ্যানুপাতিক প্রদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে বলে দাবী করেন এই জামায়াত নেতা। এসময় তিনি জাতীয় সংসদের ৩০০নং আসন বান্দরবানে এডভোকেট আবুল কালাম আজাদকে আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ঘোষনা করেন।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকালে ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় রাজার মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বান্দরবান জেলা শাখা কর্তৃক আয়োজিত বিশাল কর্মী ও সুধী সমাবেশে প্রধান অথিতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এসব কথা বলেন।
বান্দরবান জেলা জামায়াতের আমীর এসএম আবদুচ ছালাম আজাদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান, চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য অধ্যাপক আহসান উল্লাহ, চট্টগ্রাম অঞ্চল টিমের সদস্য মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম অঞ্চল টিমের সদস্য অধ্যাপক জাফর সাদেক, চট্টগ্রাম অঞ্চল টিমের সদস্য অধ্যাপক নুরুল আমিন, কক্সবাজার জেলা আমীর অধ্যক্ষ নুর আহম্মদ আনোয়ারী, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার আমীর অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল মোমেন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার আমীর অধ্যাপক আব্দুল আলিম, চট্টগ্রাম দক্ষীণ জেলার আমীর এড.আনোয়ারুল আলম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলার আমীর আলাউদ্দীন সিকদার, বান্দরবান পার্বত্য জেলার নায়েবে আমীর ও জেলা পরিষদের সদস্য এ্যাড. মুহাম্মদ আবুল কালামসহ জেলা-উপজেলার নেতৃবৃন্দরা।
চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান সেদিন পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীকে বাঙ্গালী হয়ে যাওয়ার কথা বলে পার্বত্যাঞ্চলে বিবেদ সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক বীজ রোপন করে ছিল। পাহাড়ের দীর্ঘবছর ধরে অশান্তি সৃষ্টি, শান্তি বাহিনী সৃষ্টির জন্য একমাত্র শেখ মুজিবুর রহমান দায়ী। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪সালে পাহাড়ে অস্ত্র উদ্ধারের নামে পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর চাকমা ও মারমাসহ ১৩হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে জাতিগোষ্ঠীর এক ইঞ্চি মাটি, কোন জায়গায় বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামের কোন নেতাকর্মী দখল করেনি। তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর হাজার, হাজার একর জায়গা, পাহাড় আওয়ামীলীগ ও তাদের দোসর জাসদসহ অন্যান্য দলগুলো দখল করেছে। তিনি প্রমান স্ব-রূপ বলেন, বাংলাদশের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) এর নেতা আ.স.ম আব্দুর রব বান্দরবানের লামায় ২'শ ৫০একর জায়গা ও বড় বড় পাহাড় দখল করেছে এবং সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর সভাপতি হাসানুল হক ইনু লামায় ইয়াংছা এলাকায় ২'শ ৫০একর জমি-পাহাড় দখল করে নিয়েছে।
সমাবেশে অন্যান্য নেতারা বলেন, গত ১৭ বছরে আমাদের প্রতিটি অফিসে তালা লাগানো হয়েছে। আমরা ঘরে থাকতে পারিনি, আমাদেরকে গুম করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে, অত্যাচার-নিপীড়ন করা হয়েছে। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ফাঁসিতে ঝূলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাই আওয়ামীলীগের মতো ফ্যাসিস্টদেরকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে।
এসময় বক্তারা আরো বলেন, আল্লাহর আইন এবং সৎ লোকের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এদেশে একটি ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে। যে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা হবে, নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে, মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে, বনে-জঙ্গলে খালে বিলে আর লুকিয়ে রাত কাটাতে হবেনা, দারিদ্র বিমোচন হবে, দেশ অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ হবে। সেই আলোকে জামায়াতের আগামী দিনের কর্মপন্থা নির্ধারণের লক্ষ্যে এই কর্মী ও সুধী সমাবেশের আয়োজন।
বান্দরবান জেলা জামায়াতের আমির এসএম আবদুচ ছালাম আজাদ বলেন, ঐতিহ্যবাহী রাজার মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইলামীর এ কর্মী ও সুধী সমাবেশ হচ্ছে বান্দরবানের ইতিহাসের স্মরণকালের কর্মী ও সুধী সমাবেশ। বান্দরবানে চার দলীয় ঐক্যজোট সরকারের আমলের পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বান্দরবান জেলার এটিই হচ্ছে সর্ববৃহৎ কর্মী ও সুধী সমাবেশ।