১৬ বছর ছিলেন দল থেকে বিচ্ছিন্ন, যুবদলে টিকতে না পেরে কৃষকদলে ঠিকাদার মেহেদী
মো: নজরুল ইসলাম (টিটু), বান্দরবান : দীর্ঘ ১৬ টি বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে আওয়ামীলীগের কোন পদে না থাকলেও সমর্থন দেখিয়ে আস্তা অর্জন করেন সাবেক পার্বত্য মন্ত্রীসহ স্থানীয় নেতাদের। তাদের তেল মেরে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির আশ্রয়ের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে হাজার কোটি টাকার মালিক বনেছে ঠিকাদার আনিচুর রহমান সুজন ও তার ছোট ভাই মো: অহিদুর রহমান চৌধুরী মেহেদী। সাবেক মন্ত্রীর মন জয় করতে দুই ভাই ভাড়া থাকতেন সাবেক মন্ত্রীর বাসাতেই। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পরই আনিচুর রহমান সুজন বান্দরবান থেকে পালিয়ে গেলেও থেকে যায় মেহেদী। তারপর থেকে সে আওয়ামী সরকারের আমলে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির হাত থেকে বাঁচতে দৌড়ঝাপ দিতে থাকে বিএনপির ধারে। কখনো যুবদল, আবার কখনো কৃষকদলে। অবশেষে ২০২৪সালের ডিসেম্বরে কোন মতে কৃষকদলের নেতাদের ম্যানেজ করে যোগ দেয় জেলা কৃষকদলের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে। এমনটা অভিযোগ উঠে এসেছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগি ঠিকাদার আনিচুর রহমান সুজনের ছোট ভাই মো: অহিদুর রহমান চৌধুরী মেহেদীর নামে।
অভিযোগ উঠেছে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে সাবেক পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুরের আর্শিবাদ পুস্ট হয় দুই ভাই আনিচুর রহমান সুজন ও মো: অহিদুর রহমান মেহেদী। আর এ সুযোগে সাবেক পার্বত্য মন্ত্রী ও তার সহধর্মীনিকে নানা কৌশলে আয়ত্বে এনে ভাগিয়ে নেয় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ণ বোর্ড, এলজিইডি, জেলা পরিষদের শত কোটি টাকার কাজ। আর নিম্নমানের কাজ করে কাজের অধিকাংশ টাকাই মেরে দেন। এছাড়াও আরো অনেক অবৈধ ব্যবসার কাজেও লিপ্ত ছিলেন এ দুই ভাই। আরো অভিযোগ উঠেছে, অতীতের কোন একসময় মো: অহিদুর রহমান মেহেদী কলেছে ছাত্রদল করলেও সাবেক মন্ত্রীর আর্শিবাদ পাওয়ার পর থেকে দীর্ঘ ১৬বছরেরও বেশি সময় ছিলেন বিএনপি রাজনীতির বাইরে। এসময় বিএনপির কোন মিছিল মিটিং এ তার উপস্থিতি দেখা না গেলেও আওয়ামী নেতাদের সাথে ঠিকই ছিল তার নিয়মিত বসবাস ও আড্ডা। নিজেকে আওয়ামীলীগ দাবি করতে ভাড়া থাকেন সাবেক পার্বত্য মন্ত্রীর বাসায়। এমনকি বিএনপির চেয়ারপারসনকেও গালাগালি করতো সবার সাথে তালমিলিয়ে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে ৫ই আগষ্টের ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর। বড় ভাই আনিচুর রহমান সুজন তার কু-কৃর্তির জন্য গা ঢাকা দিলেও নিজেদের উপার্জিত সম্পত্তি বাচাতে মো: অহিদুর রহমান চৌধুরী মেহেদী সু-কৌশলে আবারও বিএনপি রাজনীতিতে যোগ দিতে মারিয়া হয়ে উঠে। কয়েক দিন যুবদলে যোগ দিতে চেষ্টা করে ব্যর্থও হয়। অবশেষে কোন মতে ম্যানেজ করে যোগ দেয় কৃষক দলে। কৃষক দলে যোগ দিয়ে নতুন ভাবে গর্জে উঠে সে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুই ভাই মিলে বাগিয়ে নেয়া কোটি কোটি টাকার অসমাপ্ত কাজগুলো বিএনপির ব্যানারে হরদম চালিয়ে যাচ্ছে সে। তাদের অভিযোগ ৫ই আগস্টের পর ১৬ বছরে উপার্জিত তাদের অঢেল সম্পত্তি ও বাগিয়ে নেয়া কোটি টাকার কাজ রক্ষা করতেই মারিয়া হয়ে যোগ দিয়েছে বিএনপির কৃষক দলে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, কোন এক সময় কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র বাইস প্রেসিডেন্ট ছিল। কিন্তু আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে সটকে পড়ে বিএনপির রাজনীতি থেকে। আওয়ালীগ নেতা আপন বড় ভাইয়ের সাথে থেকে সাবেক পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুরের হাত ধরে এ দুই ভাই ভাগিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকার ঠিকাদারী কাজ। এসময় পুরোপুরি সরে পরে বিএনপির রাজনীতি থেকে। বিএনপির কোন মিছিল মিটিংয়েও যোগ দিতে দেখা যায়নি এ কয়েক বছর। কিন্তু ৫ই আগষ্টে ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর পালিয়ে যায় তার বড় ভাই আনিচুর রহমান চৌধুরী সুজন। আর মো: অহিদুর রহমান চৌধুরী মেহেদী মারিয়া হয়ে উঠে বিএনপিতে যোগ দিতে। দলের অসুষ্টির কারণে কয়েকদিন চেষ্টা করে যুবদলে যোগ দিতে না পারলেও কোনমতে ম্যানেজ করে যোগ দেয় কৃষক দলে।
এদিকে ৫ই আগষ্টের ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর সবচেয়ে বেশি সুবিধা নেয়া অহিদুর রহমান চৌধুরী মেহেদিকে বিএনপির কৃষক দলে সুযোগ দেয়ায় ক্ষুব্দ দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, তাকে কৃষক দলে স্থান দেয়া মানে তাদের আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে অবৈধভাবে গড়ে সম্পত্তি রক্ষা করার সুযোগ দেয়া। তারা মনে করেন, তাকে কৃষকদল থেকে অপসারন করা না হলে ভবিষ্যতে আওয়ামীলীগের আরো দালালরা তার দিকে ইশারা করে বিএনপিতে আশ্রয় নেয়ার সুযোগ পাবে। তারা তাকে অপসারণেরও দাবি জানিয়ে বলেন, ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সবচেয়ে সুবিধা বাদী ঠিকাদার ৫ই আগষ্টের পর পল্টিমেরে আবারো বিএনপির কৃষকদলে যোগ দেবার সুযোগ দেবার কারণে আমরা হতাশ। তাদের দাবি, তদন্ত করে তাকে কৃষকদল থেকে বহিষ্কার করে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে অবৈধ পথে উপার্জিত সকল সম্পত্তি দুদকের কাছে তুলে ধরতে হবে।
এ বিষয়ে জিয়া মঞ্চের পৌর সভাপতি মো: হাসান বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে ১৬বছরই মো: অহিদুর রহমান চৌধুরী মেহেদী আওয়ামীলীগের সাথে থেকে সুবিধা নিয়ে কামিয়েছে কোটি কোটি টাকা। মন্ত্রীকে খুশি করতে তার বিল্ডিং ভাড়া থেকেছেন। বিএনপির কঠিন সময়ে তাকে পাশে পায়নি জেলা বিএনপি। জেলা বিএনপির সবাই তার সম্পর্কে জানে। অথচ আমরা সবসময় ছিলাম বিএনপির মাঠে, জেলও খেটেছি। খেয়ে না খেয়ে ছিলাম অনেক বছর। কিন্তু আজ আমাদের চেয়ে তার মূল্যায়ণ বেশি। নেতাকর্মীদের সঠিক মূল্যায়ণ না করলে, এত ত্যাগ করে লাভ কি? আমরা চাই বিএনপিতে মিরজাফর ও দালাল মুক্ত কমিটি।
তবে যুবদলে চেষ্টা করেও যোগ দিতে না পারার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা যুবদলের সভাপতি জহির উদ্দিন মাসুম বলেন, জেলা যুবদল হচ্ছে ত্যাগী নেতাকর্মীদের জন্য। হঠাৎ করে কেউ আসলেতো যোগ দেবার সুযোগ নাই। তবে সে একসময় ছাত্রদল করতো এটা জানি।
জেলা যুবদলের সেক্রেটারী আরিফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সে যুবদলে যোগ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তার কেন যেন তাড়া ছিল। যুব দলের কমিটি করতে দেরি হওয়ায় সে নিজে থেকেই সরে গিয়ে তড়িগড়ি করে কৃষকদলে যোগ দেয়। তবে সে কেন এ ধরনের আচরণ করেছে জানিনা।
জেলা কৃষকদলের সেক্রেটারী মো: মনির হোসেন বলেন, সে কৃষকদলে কিভাবে কাকে ম্যানেজ করে যোগ দিয়েছে আমি জানিনা। এটি আমার দেখার বিষয়ও না।
এদিকে জেলা কৃষকদলে যোগ দেবার ব্যাপারে নব গঠিত জেলা কৃষকদলের সভাপতি ইয়াছিনুল হক রিপন বলেন, সেতো আগে যুবদলে চেষ্ঠা করেছিল যোগ দিতে। কিন্তু হঠাৎ করে আবার কৃষকদলে যোগ দেয়। একসময় সে ছাত্রদল করতো। আওয়ামী সরকারের আমলেও সে আমাদের সাথে যোগাযোগ রেখেছে।
এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাচিং প্রু জেরী বলেন, আমি এ বিষয়ে জানিনা। বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।
তবে তড়িঘড়ি করে কৃষকদলে যোগ দেবার কারণ জানতে চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন মো: অহিদুর রহমান চৌধুরী মেহেদী। সে বলে সবকিছু আপনাকে বলতে হবে নাকি, পরে ব্যস্ততার অজুহাতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন তিনি।
এদিকে দলের উর্ধ্বতন নেতারা বিষয়টি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এবং কৃষকদলের পদ বাতিল করে দুই ভাইয়ের অবৈধ ভাবে উপার্জিত সকল সম্পত্তি দুদকের কাছে তুলে ধরার দাবি জানান জেলার স্থানীয় ত্যাগী নেতাকর্মীরা।